বাচ্চাদের সর্দি-কাশি ওষুধের নাম এবং ঘরোয়া উপায়ে নিরাময় করুন
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বাচ্চাদের জ্বর-সর্দি-কাশির ঔষধের নাম খুঁজে থাকেন? তাহলে আজকের পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে । আজকের আর্টিকেলটিতে বাচ্চাদের জ্বর সর্দি-কাশির সব থেকে ভালো ওষুধসমূহ নামসমূহ
এবং সেই সকল ওষুধ গুলো কেন আপনি খাওয়াবেন সে সমস্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব । তাই আপনি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন । তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক ।
ভূমিকা
অভিজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণত জ্বর , সর্দি , কাশি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে ঠান্ডা লাগার মাধ্যমে।
অর্থাৎ প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী যখন আবহাওয়া পরিবর্তন হয় তখন ঠান্ডা বা গরমের মাত্রা কম বেশি হতে দেখা যায়।
আর ঠিক তখনই বাচ্চাদের জ্বর , সর্দি , কাশি ইত্যাদি হয়ে থাকে । এগুলা সাধারণত একটি ভাইরাস যার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া এবং রাইনোভাইরাস সবচাইতে বেশি জনপ্রিয়।
অনেক সময় দেখা যায় যে বাচ্চারা সাধারণত এদিকে ওইদিকে ছোটাছুটি এবং খেলাধুলা করে থাকে যার কারণে ব্যাকটেরিয়া এবং এই রাইনোভাইরাস খুব সহজেই বাচ্চাদেরকে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়। এবং এরই জন্য বাচ্চাদের এ সমস্ত জ্বর সর্দি এবং কাশি ইত্যাদি হয়ে থাকে।
বাচ্চাদের জ্বর সর্দি হলে প্রাথমিক অবস্থায় করণীয়
সাধারণত বাচ্চাদের জ্বর সর্দি হলে আতঙ্কিত হওয়া কিংবা দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই কেননা ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী জ্বর সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
আবার অনেক সময় দেখা যায় যে , এটি ওষুধ না খেলে ভালো নাও হতে পারে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা আপনার প্রাথমিক কাজ ।
আরো পড়ুনঃ মনের মানসিক শান্তি পাওয়ার উপায় জেনে নিন।
এছাড়াও আপনি যদি চান যে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ঘরোয়া উপায়ে কিছু সিরাপ তৈরি করতে পারেন । যা আপনার বাচ্চার জ্বর সর্দির নিরময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
বাচ্চাদের জ্বর-সর্দি-কাশির ঔষধের নাম
অনেক অভিজ্ঞ ডাক্তারদের মতে বাচ্চাদের সর্দি-কাশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর আপনার বাচ্চাকে ওষুধ সেবন করাবেন ।
কেননা প্রতিটি মা-বাবার চাই সুস্থ স্বাস্থ্যবান শিশু হিসেবে আমার বাচ্চা বেঁচে থাকুক। এজন্য প্রত্যেক মা-বাবারই উচিত তাড়া হুড়া না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ানো ।
জ্বরের জন্য নিচের ঔষধ গুলো খাওয়াতে পারেন ।
- Napa 50 ml
- Napa 60ml
- Napa 100 ml
- Fast 60 ml
- Xcel 60ml
- xcel 100 ml
- Xcel 120 ml
- Ace 60 ml
- Ace 100 ml
১ । Napa ( নাপা )
ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী নাপা সিরাপ জ্বর সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে নিরাময়ক হিসেবে জনপ্রিয় ।
সাধারণত দুইটি বোতলে পাওয়া যায় । যথা ঃ
- ৫০ মিলি যার মূল্য মাত্র 35 টাকা
- ৬০ মিলি যার মূল্য মাত্র ৫০ টাকা
২ । Fast ( ফাস্ট )
ছোট বাচ্চাদের জ্বরের ক্ষেত্রে ফার্স্ট ওষুধ বর্তমানে আমাদের মাঝে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় । কেননা অধিকাংশ ডাক্তারা এ ওষুধটি বাচ্চাকে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
এটি সাধারণত জ্বর এবং বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা , দাঁত ব্যথা , কানের ব্যথা , শরীর ব্যথা , অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের ব্যাথার ক্ষেত্রে এটি নিরাময়ক হিসাবে কাজ করে ।
এটি সাধারণত একটি বোতলে পাওয়া যায় । যথা ঃ
- ৬০ মিলি যার মূল্য মাত্র 35 টাকা
৩ । Xcel (এক্সেল )
বাচ্চাদের জ্বরের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ডাক্তার এক্সেল সিরাপ খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন । কেননা এ সিরাপটি খাওয়ানোর ফলে বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের জ্বর এবং তার শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
এটি সাধারণত দুইটি বোতলে পাওয়া যায় । যথা ঃ
- ৬০ মিলি যার মূল্য মাত্র 35 টাকা
- এবং ১০০ মিলি যার মূল্য মাত্র 50 টাকা
৩ । Ace ( এইস )
এইস এটিও সাধারণত একটি বাচ্চাদের জ্বর নিরাময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । সাধারণত উপরোক্ত এবং এই এইস ওষুধগুলো তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই ।
এটি সেবনের ফলে আপনার বাচ্চা খুব সহজেই জ্বর থেকে মুক্তি লাভ করবে । এটি সাধারণত দুইটি বোতলে পাওয়া যায় । যথা ঃ
- ১০০ মিলি যার মূল্য মাত্র 35 টাকা
- এবং ১০০ মিলি যার মূল্য মাত্র ৫০ টাকা
বাচ্চাদের সর্দি কাশির ১১ টি ঔষধের নাম
নিচে ঔষধের নাম ও কার্যকারিতা এবং ওষুধের দাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ঃ
১। Adolef (এডোলেফ)
এডোলেফ সিরাপটি সেবন করার ফলে বাচ্চাদের বুকের ভিতরে জমে থাকা সর্দি-কাশি বা কফ ইত্যাদি দূর করে । এডোলেফ একটি হারবাল ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির একটি হারবাল কফ সিরাপ ।
যা ফুসফুসের বিভিন্ন ধরনের দুর্বলতা ও স্বরভঙ্গ রোগকে ভালো করে থাকে । এই সিরাপটি সাধারণত দুইটি বোতলে পাওয়া যায় । যথা ঃ
- ১০০ ml যার মূল্য 65 টাকা
- এবং ২০০ ml যার মূল্য ১০৫ টাকা
২। Adovas (এডোভাস)
বাচ্চাদের সর্দি কাশি নিরাময়ের ক্ষেত্রে এটা অনেক কার্যকারী সিরাপ হিসাবে ধরা হয় । কেননা এটি সেবনের ফলে একটি বাচ্চা তার বুকের ভিতর জমে থাকা বিভিন্ন ধরনের কফ এবং কাশি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
আর এটি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির একটি হারবাল কফ সিরাপ । এটি সাধারণত দুইটি বোতল হয়ে থাকে । যথা ঃ
- ১০০ মিলি যার মূল্য মাত্র 70 টাকা
- এবং 200 মিলি যার মূল্য মাত্র ১১০ টাকা ।
৩। Madhuvas (মধুভাস)
মধুভাস হচ্ছে একটি জনপ্রিয় সিরাপ যা ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড কোম্পানি হতে তৈরিকৃত । মধুভা স্রাবটি খাওয়ানোর ফলে
আরো পড়ুনঃ
বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের কাশি বা কফ এবং ব্রংকাইটিস ফুসফুসের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা , মাথাব্যথা এবং জ্বর ইত্যাদি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
এটি সাধারণত একটি বোতল হয়ে থাকে । যথা ঃ
- Madhuvas ১০০ ml যার মূল্য 100 টাকা
৪। Abex (এবেক্স)
বিখ্যাত ইবনে সিনহা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির সর্দি-কাশির জন্য ব্যবহৃত খুব জনপ্রিয় সিরাপ হিসাবে পরিচিত । এটি সেবন করার ফলে বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের জ্বর কাশি ঠান্ডা লাগা
এবং ব্রংকাইটিস নিরাময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । এটি সাধারণত একটি বোতল হয়ে থাকে । যথা ঃ
- ১০০ ml যার মূল্য মাত্র 35 টাকা ।
৫। Remocof (রেমোকফ)
রেমোকফ হচ্ছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি কর্তৃক বাচ্চাদের সর্দি কাশির সিরাপ হিসেবে পরিচিত । এটি সেবন করার ফলে একটি বাচ্চার খুব সহজেই জটিলতম কাশি বা কফ দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
সাধারণত এই সিরাপটি দুইটি বোতলে পাওয়া যায় । যথা ঃ
- ১০০ মিলি যার মূল্য মাত্র ৬৫ টাকা
- ২০০ মিলি যার মূল্য মাত্র ১১০ টাকা
৬। Tusca plus (তুসকা প্লাস)
তুলকা প্লাস এটিও এডোভাস এর মত স্কোয়ারড ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড কোম্পানি কর্তৃক তৈরিকৃত । এটিও বাচ্চাদের কাশি ও বিভিন্ন ধরনের কফ দূরীকরণ এবং বাচ্চাদের আরামদায়ক ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
এটি সাধারণত একটি বোতল হয়ে থাকে । যথা ঃ
- ১০০ মিলি যার মূল্য মাত্র ৮৫ টাকা
৭। Ambrox (এমব্রক্স)
এমব্রোক্সকে বিভিন্ন ধরনের সর্দি-কাশি ওষুধের মধ্যে এটি একটি অন্যতম ঔষধ যা স্কোয়ার ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি কর্তৃক তৈরি কৃত ।
এটি সাধারণত একটি বোতল হয়ে থাকে । যথা ঃ
- ১০০ মিলি যার মূল্য মাত্র ৫০ টাকা
৮। E- cof (ই- কফ)
ই-কফ হচ্ছে বাচ্চাদের কাশি দূর করার অন্যতম একটি সিরাপ যা এড্রুক নমক কোম্পানি হতে তৈরিকৃত । এটি সেবনের ফলে বাচ্চার আরামদায়ক ঘুম এবং বাচ্চার বুকের ভিতর জমে থাকা বিভিন্ন ধরনের কফ কাশি দূর করতে কাজ করে থাকে ।
এটি সাধারণত একটি বোতল হয়ে থাকে । যথা ঃ
- ১০০ মিলি যার মূল্য মাত্র ৮০ টাকা
৯। Nectar Syrup (নেকটার )
নেটটা হচ্ছে একটি অন্যতম জনপ্রিয় সিরাপ যা সেবনের ফলে আপনার বাচ্চার সর্দি-কাশি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকবে ।
এটি সাধারণত একটি বোতল হয়ে থাকে । যথা ঃ
- ৭৫ মিলি যার মূল্য মাত্র 36 টাকা ।
১০। প্যারাসিটামল
সাধারণত প্যারাসিটামল খাওয়ানোর ক্ষেত্রে আপনাদের একটা জিনিস মনে রাখতে হবে সেটি হচ্ছে এই ওষুধটা চলাকালীন অন্য কোন ধরনের ব্যথার ওষুধ , কফ সিরাপ অথবা সর্দি কাশির হারবার ওষুধ সেবনের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে ।
কারণ বিভিন্ন ধরনের ব্যথার ওষুধ এবং ওপরে যে সকল হারবাল ওষুধের কথা বলা হয়েছে সে সকল ওষুধে ও প্যারাসিটামল থাকে ।
আরো পড়ুনঃ রাতে ঘুমানোর আগে যে সকল আমল করবেন।
আর অতিরিক্ত প্যারাসিটামল খাওয়ার ফলে আপনার বাচ্চা বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি সম্মুখীন হতে পারে । এজন্য প্যারাসিটামল খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উত্তর ।
১১। এন্টিহিস্টামিন
সর্দি হাঁচি কাশি থেকে মুক্তির জন্য ডাক্তার এন্টাহিস্টামিন ওষুধ খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন । এন্টা হিস্টামিন অনেকের কাছে এলার্জির ওষুধ হিসাবেও পরিচিত । এজন্য এন্টাইজমেন্ট খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উত্তম।
বাচ্চাদের সর্দি-কাশি কেন হয় ? সর্দি লাগার কারণ
অনেক শিশু অভিজ্ঞ ডাক্তারদের মতে সাধারণত বাচ্চাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তেমন শক্তিশালী নয় , আর তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হওয়ার কারণে
বাচ্চাদেরকে খুব সহজেই বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস আক্রমণ করতে সক্ষম হয় , ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে । সাধারণত এই ভাইরাসটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে , কারণ যখন কোন ব্যক্তি কাশি বা হাচি দেয় ।
তখন এটি একজন থেকে আরেকজনের কাছে বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে । এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহারিত কোন জিনিস অন্য কোন ব্যক্তি ব্যবহারের ফলে এই রোগসমূহ ছড়াতে পারি ।
এছাড়াও সর্দি-কাশি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনে এই রোগটি বেশি হয়ে থাকে । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে একেক ঋতুতে এক এক রকম ভাইরাস দেখা যায় ।
যেমন রাইনোভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া এগুলো শরৎকালে এবং বসন্তকালে বেশি দেখা দেয় ।
এছাড়াও মায়ের ঠান্ডা লাগার কারণে এ রোগ গুলো হয়ে থাকে । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ছোট বাচ্চারা সাধারণত তার মায়ের বুকের দুধ পান করে থাকে , এজন্য বলা যায় যে মায়ের যদি কোন অসুখ হয়ে থাকে অর্থাৎ মায়ের যদি ঠান্ডা লাগে তাহলে বাচ্চারও সেই রোগটি হতে পারে ।
আরো পড়ুন ঃ লিভারের হজম শক্তি কমে গেলে কি হবে জেনে নিন।
এছাড়াও বাচ্চাকে গোসল করানো ঠান্ডা লাগার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয় কেননা ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চাকে যদি আপনি আপনার ইচ্ছামত দিনের বিভিন্ন সময়ে গোসল করান তাহলে বাচ্চার সর্দি-কাশি খুব সহজেই হতে পারে ।
এজন্য আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে গোসল করানোর সময় ঠান্ডা পানি নয় বরং কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে এবং যত দ্রুত পারেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে গোসল শেষ করে বাচ্চার শরীর দ্রুত মুছে দিতে হবে ।
বাচ্চাদের ঘরোয়া উপায়ে কাশি দূর করার উপায়
বাচ্চাদেরকে সবসময় ঔষধ না খাইয়ে ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে কিছু ঔষধ খাওয়াতে পারেন। কারণ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরিকৃত সিরাপে কোন প্রকারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না ।
আমাদের মধ্যে দেখা যায় অনেক অভিভাবকই এলোপ্যাথির পরিবর্তে ঘরোয়া ওষুধকে বেশি বিশ্বাস করে থাকেন । যেগুলো বাচ্চাদের জ্বর-সর্দি এবং কাশি ইত্যাদি দূর করার জন্য ম্যাজিকের মত কাজ করে থাকে ।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই ঘরোয়া উপায়ে রোগ নিরাময়য়ের উপায় এবং ঔষধের নাম এবং কিভাবে আপনি সেগুলো তৈরি করবেন ।
- আদা ও মধুর সিরাপ
- দুধ ও মধুর সিরাপ
- মধু ও লেবুর রসের সিরাপ
- মৌরি ও মধুর সিরাপ
- আদা রসুন ও পেঁয়াজের সিরাপ
- আদা রসুন ও পেঁয়াজের সিরাপ
- গরম করে পানি বা তরল খাবার পান করান
- শিশুকে শোয়ানোর সময় তার মাথা উঁচু করে রাখুন
আদা ও মধুর সিরাপ
অভিজ্ঞ ডাক্তারদের মতে আদাও মধুর যুক্ত সিরাপ সর্দি কাশির জন্য ঘরোয়া চিকিৎসার অন্যতম নিরাময়ক হিসেবে কাজ করে । কেননা আদা হচ্ছে গরম প্রকৃতির এবং অন্যদিকে মধুর মধ্যে রয়েছে
জিংক কপার এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এছাড়াও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান এগুলো সংমিশ্রণে তৈরিকৃত সিরাপ আপনার বাচ্চাকে সর্দি কাশি এবং বুকের মধ্যে জমে থাকা বিভিন্ন ধরনের কফ দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
কিন্তু ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণত এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদেরকে মধু না খাওয়ানো উত্তম । কেননা এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদেরকে মধু খাওয়ালে বটুলিজমের শিকার হতে পারে যার কারণে আপনার বাচ্চার বিপদ হওয়ার আশঙ্কা থাকে ।
সর্ব প্রথমে একটি পাত্রে ৪ চামচ আদার রস এবং ৪ চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন । ভালোভাবে মিশানোর পরে , সেগুলোকে একটি এয়ার টাইট জারে স্টোর করে দিন । তাহলে তৈরি হয়ে যাবে আদা ও মধু সিরাপ যা আপনি সর্দি কাশি হলে তাদের সিরাপ দিতে পারবেন ।
দুধ ও মধুর সিরাপ
অনেক সময় ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে দুধের সাথে মধু মিশে পান করলে সর্দি-কাশি সারানোর ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
তাহলে চলুন কিভাবে তৈরি করবেন জেনে নেওয়া যাক ।
এর জন্য আপনাকে একটা পাত্রে দুধ ফুটিয়ে নিন এবং সামান্য ঠান্ডা করে নিন এর পর মধু দিয়ে দিন , তাহলে দুধ এবং মধু দিয়ে সিরাপ তৈরি হয়ে যাবে ।
মধু ও লেবুর রসের সিরাপ
ঘরোয়া উপায়ে এর মধ্যে আপনি মধু ও লেবুর রস দিয়ে সিরাপ তৈরি করে কাশি নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করতে পারেন । মধুর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে এবং লেবুর মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে ।
এজন্য এই দুইটির সংমিশ্রনে তৈরি সিরাপ সর্দি-কাশি নিরাময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপনি সেটা তৈরি করবেন ।
প্রথমে আপনাকে একটি পাত্র নিতে হবে এবং উক্ত পাত্রে চার চামচ লেবুর রস এবং চার চামচ মধু নিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে । এরপরে গরম জলে পরিষ্কার করা এয়ারটাইট কন্টে নারে এই সিরাপটি ভিতরে রেখে দিন । তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে মধু ও লেবুর রসের সিরাপ ।
মৌরি ও মধুর সিরাপ
ঘরোয়া উপায়ে কাশি উপশমের জন্য এটি অন্যতম একটি সিরাপ । যেটি আপনি নিজে বাসায় তৈরি করে আপনি আপনার বাচ্চার সর্দি কাশি দূর করতে পারেন । এটি সাধারণত কফ শ্বাসকষ্ট বুকের ভিতর ঘর্ঘর শব্দ হলে এই সিরাপটি ব্যবহার করুন ।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে মৌরি ও মধু দিয়ে সিরাপ তৈরি করবেন ।
প্রথমে আপনাকে একটি পাত্রে দুই কাপ মত গরম জল ফুটিয়ে নিন । এরপর গরম পানিতে এক চামচ গুঁড়ো মৌরি দিন এবং সেটিকে আরো ভালোভাবে ফুটতে দিন।
পরে এটি ঠান্ডা ঠান্ডা করে এতে দুই চামচ মধু মিশে দিন । তাহলে তৈরি হয়ে যাবে মৌরি ও মধুর তৈরিকৃত সিরাপ ।
আদা রসুন ও পেঁয়াজের সিরাপ
সর্বশেষে আদা রসুন ও পেঁয়াজের তৈরিকৃত সিরাপ সর্দি-কাশি এবং বুকে জমে থাকা কফ নিরময় করতে সহায়তা করে ।
তৈরিকৃত পদ্ধতি।
প্রথমে আপনি একটি পাত্র নিন এবং পাতের মধ্যে জল ও আধা চামচ মধু মিশে নিন। এবং একই সাথে কিছু পেয়াজ ও কিছু রসুন মিশিয়ে দিন । পরিশেষে আপনাকে এই মিশ্রণটি ঢেকে রেখে দিন । কিছুক্ষণ পর এই মিশ্রণকৃত জলের পানিটা পান করুন । যা সর্দি কাশি নিরাময়ক ।
গরম করে পানি বা তরল খাবার পান করান
ঠান্ডা লাগা এবং সর্দি কাশি ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন এবং পানি বা যে কোন খাবার একটু উষ্ণ বা গরম অবস্থায় পান করুন । যা আপনার বাচ্চাকে এই রোগটি থেকে সেরে উঠতে সহায়তা করবে ।
শিশু অভিজ্ঞ ডাক্তারদের মতে কোন বাচ্চাকে যদি ঘরোয়া উপায়ে সর্দি কাশি দূর করাতে চান , তাহলে আপনাকে ঠান্ডা পানির পরিবর্তে গরম পানি পান করাতে হবে ।
এছাড়াও অন্যান্য খাবার গুলো ও চেষ্টা করবেন একটু গরম অবস্থায় খাওয়ানো । যার ফলে আপনার বাচ্চার গলার ব্যথা এবং সর্দি কাশি দূর করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ।
শিশুকে শোয়ানোর সময় তার মাথা উঁচু করে রাখুন
শিশুদের ক্ষেত্রে গুরুতর কাশি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অনেক সময় সর্দি নাক থেকে গলা পর্যন্ত চলে আসতে পারে যার ফলে কাশি সৃষ্টি হয় ।
ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে শোয়ানোর সময় মাথা উঁচু করে রাখলে সর্দিটা অনেক সময় গলা পর্যন্ত আসে না । যার ফলে এমন গুরুতর কাশি সৃষ্টি হয় না । এজন্য শিশুকে শোয়ানোর সময় তার মাথা উঁচু অবস্থানে রাখবেন যা আপনার বাচ্চাকে সুস্থ করে তুলতে সহায়তা করবে।
শীতকালে বাচ্চাদের গরম জামাকাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন অর্থাৎ শীতের পোশাক পড়ানোবাচ্চাদের যে সকল লক্ষণ দেখা দিলে খুব দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে
সর্দি কাশি সাধারণত বলা যায় যে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায় । ডাক্তারদের মতে সর্দি-কাশি এমন কোন জটিলতম রোগ নয় । এটির ক্ষেত্রে ওষুধ সেবন না করলেও । একটা সময় পর গিয়ে ভালো হয়ে যায়।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বিভিন্ন কারণে এটি ভালো হতে চাই না , কারণ অনেকের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং তাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের শ্বাস-প্রশ্বাস বা অ্যাজমার মত রোগ রয়েছে ।
তাদের ক্ষেত্রে সর্দি-কাশি থেকেও নিউমোনিয়ার মতো জটিলতম রোগের সৃষ্টি হতে পারে । তবে আতঙ্কিত কিংবা ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই কেননা আপনার শরীরে যদি তেমন কোন লক্ষণ দেখা দেয় , অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন । তাহলে এটি থেকে অবশ্যই মুক্তি পাবেন ।
জ্বর-সর্দি এবং কাশির ক্ষেত্রে যদি দেখেন যে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আপনার বাচ্চার রোগ ভালো হচ্ছে না । তাহলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারে পরামর্শ নিবেন । এখানে আতঙ্কের কিছু নেই ডাক্তারের চিকিৎসা নিলে এটি খুব তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে ।
এই পোস্টটি সম্পর্কে লেখকের শেষ মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা বাচ্চাদের জ্বর সর্দি ও কাশির ওষুধের নাম এবং ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি । আশা করি এই পোস্টটি সম্পন্ন পড়েছেন ।
এবং ঘরোয়া উপায়ে যে সকল সিরাপ সর্দি-কাশির জন্য খেতে বলা হয় সে সকল সিরাপ শুধুমাত্র এক বছরের বাচ্চাদেরকে খাওয়ানো যাবে । বাচ্চার বয়স এক বছরের কম হলে সেই সকল ঘরোয়া উপায়ে তৈরিকৃত সিরাপ খাওয়ানো যাবে না ।
এরপরেও যদি আপনার কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা কিংবা কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে জানাবেন ।
এবং এধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন কেননা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত জ্ঞান মূলক আর্টিকেল প্রকাশ করা হয় । আর এতক্ষন আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । আল্লাহ হাফেজ ।
মর্ডান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url