দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি করবেন জেনে নিনবর্তমানে পেটে গ্যাস হয় না এমন মানুষ হয়তো তেমন একটা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে কেননা এই রোগের মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই আছে। তাই আপনি যদি আপনার পেটের গ্যাস খুব সহজে কমাতে চান? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
কেননা আজকের পোস্টটির মাধ্যমে আপনি খুব সহজে ঘরোয়া কিছু উপায়ের মাধ্যমে পেটের এই গ্যাসের সমস্যা থেকে চিরস্থায়ী মুক্তি লাভ করবেন। তাই আপনি যদি আপনার কাঙ্খিত সমস্যার সমাধান পেতে চান তাহলে অবশ্যই আজকের পোস্টটি আপনাকে সম্পূর্ণ ধৈর্য সহকারে পড়তে হবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
পেটে গ্যাস কেন হয়?
বর্তমান সময়ে (৭০-৮০)% মানুষের গ্যাস হয় শুধুমাত্র খাবারের কারণে। কেননা বর্তমান সময়ে আপনারা অধিকাংশ যে সকল খাবার খেয়ে থাকেন সেগুলা অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং মসলাদার যুক্ত হয়ে থাকে। আর ঠিক সেই সফল
অতিরিক্ত তেল এবং মসলাযুক্ত খাবার পেটে গিয়ে সেটি হজমে ব্যাঘাত ঘটে যার ফলে পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়।
গ্যাসের সমস্যা বর্তমান সময়ে এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাই এই সমস্যা থেকে বের হতে হলে আপনাকে অবশ্যই সর্বপ্রথমে জানতে হবে যে কোন সকল খাবারের জন্য পেটে গ্যাসের সমস্যা হয়।
আরো পড়ুনঃ লিভারের হজম শক্তি কমে গেলে কি হবে জেনে নিন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে মনে করুন আজকে আপনার পেটে গ্যাস হয়েছে, এখন গতকালকে আপনি যে সকল খাবার খেয়েছেন সেই সকল খাবার পরবর্তীতে আপনাকে খাওয়া যাবে না।
অর্থাৎ আপনাকে আগে চিহ্নিত করতে হবে যে কোন খাবারের ফলে আমার এই সমস্যাটা হয়েছে? কেননা অনেক সময় দেখা যায় যে একজন ব্যক্তির একটি খাবার খাওয়ার পরেও হজম হয়ে যায় কিন্তু
আরো পড়ুনঃ হজমশক্তি বৃদ্ধির 17 টি উপায় জেনে নিন।
ঠিক সেই খাবারটি অন্য আরেকজন ব্যক্তি খেয়ে হজম করতে পারে না। এছাড়াও গ্যাস বেড়ে যাওয়া বা হওয়ার কিছু খাবার রয়েছে সে সকল খাবার গুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
- অতিরিক্ত ফাইবার যুক্ত খাবার না খাওয়া
- অতিরিক্ত তেলেভাজা বিভিন্ন ধরনের ভাজাপোড়া যুক্ত খাবার না খাওয়া
- যেকোনো খাবার খাওয়ার সময় আস্তে আস্তে চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া
- ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করা
- চুইংগাম খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করা
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এছাড়াও আপনার এই গ্যাস সমস্যায় চিহ্নিতযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। অর্থাৎ যে সকল খাবার খেলে গ্যাসের সৃষ্টি হয় সেগুলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ঘরোয়া উপায় জেনে নিন।
পেটের গ্যাস সাধারণত অনেক কারণে হয়ে থাকে অনেক সময় লিভারের হজম শক্তি কমে যাওয়ার ফলে এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার ফলে হয়ে থাকে।
প্রত্যেক ব্যক্তির প্রত্যেক পরিশ্রমের পিছনে একমাত্র চালিকাশক্তি হচ্ছে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করা এবং সুস্বাস্থ্যের জীবন যাপন করা।
কিন্তু সেই সুস্বাস্থ্য জীবন যাপনে অন্যতম একটি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পেটের গ্যাসের সমস্যা। তাই আপনার টেনশন এর কিছু নেই কেননা কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে
যেগুলো আপনি মেনে চললে আশা করি আপনি উক্ত সমস্যা থেকে দূরে থাকবেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই ঘরোয়া উপায়গুলো কি কি
- শসা খাওয়া
- গরম পানিতে গোসল করা
- পেটে মাসাজ করা
- এলাচ খাওয়া
- কলা খাওয়া
- তুলসী পাতা
- দারুচিনি
- খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া
- শারীরিক ব্যায়াম করা
- অতিরিক্ত ফাইবার যুক্ত খাবার না খাওয়া
- পুদিনা পাতা
- মৌরি ফল খাওয়া
- লবঙ্গ
- দুধ পান করা
- ডাবের পানি পান করা
- কলাও কমলা ফল খাওয়া
- টক দই খাওয়া
- এলোভেরা
- রসুন খাওয়া
- পেঁপে খাওয়া
- আদা খাওয়া
- ডাবের পানি পান করা
১। শসা খাওয়া।
সাধারণত শসার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যথাক্রমে এ, বি, সি যা প্রতিদিন একজন মানব দেহের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। পেটের গ্যাস কমানোর পাশাপাশি
এছাড়াও কোন ব্যক্তির যদি পেটে পাথর হয় তাহলে নিয়মিত শসা খাওয়ার ফলে ওই ব্যক্তির পেটের পাথর গলে যেতে সাহায্য করবে। এবং এই শসা খাওয়ার ফলে একজন ব্যক্তি নিত্য প্রতিদিন
যে সকল খাবার পান করে সেগুলো হজম হওয়ার পর সেই খাবারগুলোর কিছু বর্জ্য বা বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয় যা শরীর থেকে বের করতে ভূমিকা রাখে।
২। পেট মাসাজ করা।
আপনার যদি অতিরিক্ত গ্যাস হয় তাহলে আপনার সর্বোত্তম করণীয় হলো গ্যাস কমানোর কিছু আলোচিত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি পেটের উপরিভাগকে আলতোভাবে মাসাজ করা কেননা
পেটের উপরিভাগ যদি আপনি ভালোভাবে মাসাজ করেন তাহলে আপনার পেটের গ্যাস অন্ত্রের নিচে চলে এবং পায়ুপথ দিয়ে খুব সহজেই বের হয়ে যাবে।
৩। গরম পানি দিয়ে গোসল করা।
গরম পানি দিয়ে গোসল করার ফলে শরীরের স্বাভাবিকভাবে সঞ্চালনা বেড়ে যায়। এছাড়াও দেখা যায় যে গরম পানি শুধুমাত্র পেটের গ্যাস বা ব্যথা কমানোর জন্য উপযোগী এমনটা নয়,
শরীরের আরো বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ পতঙ্গ সচল রাখতে সহায়তা করে। এজন্য আপনার এই অবস্থায় শরীরের সুস্থতা বৃদ্ধির জন্য হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করা উত্তম।
৪। টক দই এবং জিরা খাওয়া।
অনেকেই এই গ্যাসের ব্যথার জন্য টক দইয়ের সঙ্গে জিরা গুঁড়া জলের সঙ্গে মিশিয়ে পান করে। কেননা টক দইয়ের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সেলিনিয়াম, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম এর মতো উপাদান। যা শরীরের শুধুমাত্র গ্যাস নয় এছাড়া আরো বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৫। ধূমপানের অভ্যাস পরিহার করা।
ধূমপানের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই কেননা ধূমপান শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির অন্যতম কারণ, ধূমপানের কারণে আপনার ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের নেশা জাতীয় জিনিস পান করা থেকে বিরত থাকুন।
এগুলা শুধুমাত্র গ্যাস সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে বিষয়টা এমন নয়, এ সকল ক্ষতিকারক দ্রব্য শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
৬। দারুচিনি খাওয়া।
অনেক সময় দারুচিনির অভাবে খাবার খেতে না পারায় অনেকক্ষণ যাবৎ খালি পেটে থাকায় পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। আর দারুচিনিতে যে সকল উৎপাদন রয়েছে সে সকল উপাদানগুলো হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
আরো পড়ুনঃ রোনালদো কোন ধর্মের অনুসারী জেনে নিন।
অর্থাৎ একজন ব্যক্তির খিদে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এক গ্লাস পানিতে আধা চামচ দারুচিনি মিশিয়ে পান করলে পেটের গ্যাস খুব দ্রুত কমে আসে।
৭। কলা খাওয়া।
কলাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম যা খাওয়ার ফলে পেটের গ্যাস কমার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল।
৮। নিয়মিত শারীরিক চর্চা অর্থাৎ ব্যায়াম করা।
ব্যায়ামের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই, কেননা নিয়মিত শারীরিক চর্চা করলে শরীর ও মন দুটোই সুস্থ থাকে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সচল রাখতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুনঃ লিওনেল মেসি কোন ধর্মের অনুসারী জেনে নিন।
আর কোন ব্যক্তির যদি শারীরিক অবস্থা ভালো থাকে অর্থাৎ সুস্থ থাকে তাহলে সে যে খাবারটা খাবে সে খাবারটা হজম করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। ব্যায়াম করার ফলে আপনি সুস্থ থাকবেন এবং আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের খারাপবায়ু খুব তাড়াতাড়ি ত্যাগ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।
৯। মৌরি ফল খাওয়া।
কোন ব্যক্তি যদি মৌরি ফলকে ভিজিয়ে ঠান্ডা করে ওই ঠান্ডা পানিটা পান করে তাহলে তার পেটের গ্যাস খুব সহজে কমিয়ে আসে। কেননা মৌরি ফলে বিভিন্ন ধরনের আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন সি যুক্ত পুষ্টি রয়েছে।
যা শুধুমাত্র পেটের গ্যাসের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে এমন নয় এছাড়াও এই মৌরি ভেজানো পানি মানুষের হার্টকে সুস্থ রাখতে এবং যাদের অতিরিক্ত ওজন, সে সকল মানুষদের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
১০। লবঙ্গ ও এলাচ খাওয়া।
গ্যাস কমানোর জন্য অন্যতম ঘরোয়া উপায় হচ্ছে লবঙ্গ ও এলাচ। কেননা কোন ব্যক্তি যদি তার প্রতিদিন অন্তত একটি করে লবঙ্গ খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে তার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং বিভিন্ন ধরনের গ্যাস, বদহজম, এবং বমি বমি ভাব থাকলে তা তাৎক্ষণিক দূর হয়ে যাবে।
এবং অপরদিকে এলাচ গরম পানিতে এলাচ মিশিয়ে পান করলে অনেক সময় গ্যাসের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের শ্বাসকষ্ট ও দূর হয়ে যায়। এছাড়াও এই দুটি ফল আপনি চাইলে কোন পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে পারবেন এবং চিবিয়েও খেতে পারবেন। এ সকল ফল বিভিন্ন ধরনের মুখের দুর্গন্ধ দূর করে থাকে।
১১। আদা এবং রসুন খাওয়া।
এ সকল ফলের কথা শুনে আপনার হয়তো প্রশ্ন হতে পারে যে এগুলো তো রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। হয়তো আপনার হাসিও পেতে পারে। কিন্তু এ সকল ফলে যে সকল উপাদান থাকে সেগুলো অত্যান্ত প্রয়োজনীয় উপাদান।
আদার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফসফরাস, কপার, জিংক, এবং ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি। এবং অপরদিকে রসুনের মধ্যে রয়েছে এলিসির নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা একজন ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও আরো রসুনের উপকারিতা রয়েছে। এজন্য বলা যায় যে এ দুটি ফল সকলেরই পরিচিত। আর উক্ত উৎপাদনগুলো প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সুস্থ সবল থাকার ক্ষেত্রে।
১২। পুদিনা পাতা খাওয়া।
পুদিনা পাতায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সেলিসাইলিক এসিড, যা একজন ব্যক্তির গ্যাসের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অর্থাৎ দাঁত এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে এবং শরীরের বিভিন্ন ধরনের মৃত কোষকে শরীর থেকে দূর করতে সহায়তা করে।
১৩। ডাবের পানি পান করা।
ডাবের পানিতে রয়েছে মিনারেল এবং প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা পেটের গ্যাস কমানোর জন্য অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরোক্ত উপায় অবলম্বন করার পরেও যদি আপনার গ্যাস না কমে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। কেননা সাধারণত উপরোক্ত উপায় অবলম্বন করে খুব সহজে আপনি আপনার গ্যাসকে কমিয়ে আনতে পারবেন।
শেষ মন্তব্য
আশা করি আজকের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং বুঝতেও পেরেছেন। এই পর ও যদি আপনার কোন প্রশ্ন থেকে? থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
এবং আজকের পোস্টটির মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি কিভাবে আপনি আপনার এই নিত্য সমস্যা গ্যাস ঘরোয়া উপায়ে দূর করবেন।
আজকের পোস্টটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটের গুগল নিউজ ফলো করবেন।
কেননা আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের ওয়েবসাইটে তথ্য এবং জ্ঞানমূলক পোস্ট করে থাকি। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।
মর্ডান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url