রাতে ঘুমানোর আগে আমল - ঘুমানোর দোয়া বাংলা অর্থসহ

প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো জানতে চাচ্ছেন যে একজন মুসলিম হিসেবে ইসলামিক বিধান অনুযায়ী রাতে ঘুমানোর আগে করণীয় ঠিক কি কি , ও কি কি বর্জনীয় এবং ঘুমানোর দোয়া বাংলা অর্থসহ সমস্ত কিছু নিয়ে আজকে এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করব ।
রাতে ঘুমানোর আগে করণীয়-ঘুমানোর দোয়া বাংলা অর্থসহ
একজন ব্যক্তি তার ঘুমানো থেকে শুরু করে ঘুম থেকে ওঠা পর্যন্ত সমস্ত কিছু নিয়ে আজকের আমাদের এই আর্টিকেলটি । তাহলে আপনি যদি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেতে চান , তাহলে অবশ্যই আপনাকে আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন করতে হবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ রাতে ঘুমানোর আগে আমল

সূচিপত্র

ভূমিকা

এই পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষই তার শারীরিক ক্লান্তি দূরীকরণ করে একমাত্র ঘুমের মাধ্যমে । শরীর , স্বাস্থ্য অর্থাৎ শারীরিক সুস্থতাতে ঘুমের অবদান অপরিসীম । প্রত্যেক মুসলিম কাজকর্ম যদি ইসলামের নিদর্শিত পথে এবং রাসুল (সা.) এর সুন্নাত অনুযায়ী হয়ে থাকে তাহলে সেই মুসলমানদের প্রতিটি কর্মই আল্লাহর ইবাদতের অংশ ।

আর কোন ব্যক্তি যদি ঘুমানোর আগে কিছু আমল করে অর্থাৎ রাতে ঘুমানোর আগে করণীয় কি সেগুলো সম্পর্কে তার যদি জানা থাকে , তাহলে সে ঘুমের মধ্যে থাকলেও , সে ব্যক্তি সারারাত ইবাদত করার সওয়াব পেতে থাকে ।

রাতে ঘুমানোর আগে করণীয়

একজন ব্যক্তির জীবন-আচরণ কেমন হবে ? সে বিষয়ে যেমন ইসলাম আদব ও শিষ্টাচার দিয়েছে , তেমনি রাত্রি যাপন অর্থাৎ রাতে ঘুমানোর আগেও একজন মুমিন ব্যক্তির করনীয় সম্পর্কে ইসলামে কিছু আদব ও শিষ্টাচার রয়েছে ।

প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত ইসলামের নিদর্শিত পথ অনুসরণ করা । তাই আমরা ইসলামে যেভাবে ঘুমানোর শিষ্টাচার ও আদব রয়েছে ঠিক সেভাবে পালন করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ । তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক রাতে ঘুমানোর আগে করণীয় ? অর্থাৎ ইসলামে সে আদব ও শিষ্টাচার গুলো কি কি ।
  • সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত অর্থাৎ আয়াতুল কুরসি
  • সূরা কাফিরুন পড়া
  • তিন কুল পড়ে সমস্ত শরীরে ফু দেওয়া
  • সূরা মূলক পড়া
  • এবং সর্বশেষে ঘুমানোর দোয়া পড়া
আয়াতুল কুরসি : মানবতার মুক্তির দূত রহমাতুল্লিল আলামিন অর্থাৎ আমাদের প্রিয় নবীর হযরত মোহাম্মদ সাঃ এরশাদ করিয়াছেন যে , ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি কোন ব্যক্তি যদি পড়ে তাহলে সারারাত সে ব্যক্তি শয়তান থেকে মুক্তি হয়ে যায় অর্থাৎ শয়তান থেকে সে বিরত থাকে ।
এছাড়া আয়াতুল কুরসির অনেক ফজিলত রয়েছে । অনেক হাদিস শরীফে আয়াতুল কুরসি সম্পর্কে অনেক ফজিলতের কথা বলা হয়েছে ।সুতরাং আমরা বলতে পারি যে , ঘুমাতে যাওয়ার আগে আয়াতুল কুরসি পড়া প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ।

সূরা কাফিরুন পড়া : পবিত্র আল-কোরআনে এবং অনেক হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে সূরা কাফিরুন এর ফজিলত অনেক । মানবতার মুক্তির দূত রহমাতুল্লিল আলামিন অর্থাৎ রাসূল সাঃ এরশাদ করিয়াছেন যে , যখন আপনারা শয্যা নিদ্রার জন্য প্রস্তুতি নিবেন অর্থাৎ ঘুমাতে যাওয়ার আগে সূরা কাফিরুন পাঠ করবেন ।

ছাড়াও সুরা কাফিরুন পাঠ করার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শিরক থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । তাই বলা যেতে পারে একজন ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে , অবশ্যই সূরা কাফিরুন পাঠ করা প্রয়োজনীয়।

তিন কুল পড়ে সমস্ত শরীরে ফু দেওয়া : তিন কুল বলতে (সূরা ফালাক , নাস , ইখলাস) এই তিনটি সূরা কে বোঝায় । আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , রাসুল (সা.) প্রত্যেক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সূরা ইখলাস , সূরা ফালাক , ও সূরা নাস পাঠ করতেন ।

এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দুই হাত একত্রিত করে ফু দিতেন , শরীরের উপরিভাগ থেকে শুরু করে অর্থাৎ মুখমণ্ডল থেকে শুরু করে শরীরের সমস্ত অংশ হাত বুলাতেন । এভাবে রাসূল (সা.) তিনবার করতেন । (বুখারি, হাদিস নং ৫০১৭)

সূরা মূলক পড়া : হুরায়ম ইবন মিসআর এবং জাবের (রহঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , মানবতা মুক্তির দূত রহমাতুল্লিল আলামিন প্রত্যেকদিন ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে আলিফ-লাম-মিম তানযীল এবং তাবারাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক এই সূরা দুটি না পড়ে তিনি কখনো ঘুমাতেন না । (তিরমিজি, হাদিস নং ২৮৯২)

এছাড়া সূরা মূলক এর অনেক ফজিলত রয়েছে । অন্য একটি হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে রাসূল (সা.) এরশাদ করিয়াছেন যে , কোন ব্যক্তি যদি ৩০ আয়াত বিশিষ্ট কোরআনের একটি সূরা পাঠ করে , অন্য কোন ব্যক্তির জন্য যদি সুপারিশ করে তাহলে সে ব্যক্তিকে মাফ করে দেওয়া হবে । সেই সূরাটি হলো সূরা মূলক ।

সর্বশেষে ঘুমানোর দোয়া পড়া : আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত হইয়াছেন যে , রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন যে , কোন ব্যক্তি যদি ঘুমাতে যায় অর্থাৎ ঘুমানোর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালার নাম যদি না নেয় , তাহলে তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা । (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৫৬) ।
তাই প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত ঘুমানোর পূর্বে আল্লাহতালার নাম নিয়ে ঘুমানো । তাই রাসূল (সা.) বলেছেন ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমানো উত্তম । তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই দোয়াটি কি ?

ঘুম থেকে উঠার দোয়া বাংলায়

প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন যে রাতে ঘুমানোর আগে করণীয় ? অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমানো উত্তম । ঘুমানোর পূর্বে আল্লাহতালার নাম নিয়ে ঘুমালে অবশ্যই সে ব্যক্তি আল্লাহতালার লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি থাকে । এবং সেই ব্যক্তির উপর আল্লাহতালার রহমত বর্ষিত হতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি ঘুমিয়ে থাকেন ।

মুমিন ব্যক্তি প্রত্যেকটা কাজই ইবাদতের সমিল অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুল (সা.) এর জীবন অনুসারে এবং তাদের দেখানো পথে জীবনকে অতিবাহিত করলে , সে ব্যক্তি সব সময় সাওয়াব পেতে থাকে । 

তাই বলা যেতে পারে যে প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত সে আদব এবং সেই শিষ্টাচার গুলো পালন করা । তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘুমানো দোয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার দোয়া সমূহ ।

ঘুমানোর নিয়ম

আশা করি আপনি হয়তো এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন রাতে ঘুমানোর আগে করণীয় সম্পর্কে । তাহলে চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক ঘুমানোর সঠিক নিয়ম সম্পর্কে, প্রত্যেক ব্যক্তিরই সারাদিন পরিশ্রম করার পর শরীরের ক্লান্তি দূর করার জন্য ঘুম প্রয়োজন ।

কারণ এই ঘুমের মাধ্যমেই মানুষ শরীরের ক্লান্তিও বিভিন্ন ধরনের অলসতা দূর হয়ে থাকে । একজন মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই তার সঠিক মতো ঘুম এবং সঠিক মত খাবার প্রয়োজন । তাছাড়া কোন মানুষ সুস্থ থাকতে পারে না ।

বর্তমান সমাজে অনেকেই অনেক ভাবে ঘুমিয়ে থাকে কেউ উপুড় হয়ে ঘুমায় , কেউ পাশ ফিরে ঘুমায় , আবার কেউ একদিকে কাত হয়ে ঘুমায় ইত্যাদি । তবে এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে , ইসলাম এখানে কি বলে অর্থাৎ ইসলাম কিভাবে ঘুমাতে বলে ? তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ।

কোন কোন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে ডান দিকে ফিরে ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী । আবার কোন কোন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে বাম দিক ফিরে ঘুমালে স্বাস্থ্য ভালো থাকে । সুতরাং এখান থেকে বলা যায় যে কোন ব্যক্তি ডান বাম দুই ভাবে ঘুমাতে পারে ।

কিন্তু ইসলামে উপুড় হয়ে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে আল্লাহতালা উপুড় হয়ে ঘুমানো পছন্দ করেন না । কারণ উপুড় করেই জাহান্নামের নিক্ষেপ করা হবে । আর উপুড় হয়ে ঘুমানো জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত এজন্য আল্লাহতালা কাছে এভাবে ঘুমানো পছন্দনীয় নয় ।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আমাদের আর্টিকেলটি আপনি শেষ পর্যন্ত পড়েছেন এজন্য অনেক ধন্যবাদ । আশা করি আপনি এতক্ষণে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন যে একজন মুমিন বান্দা হিসেবে রাতে ঘুমানোর আগে করণীয়

অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আল্লাহতালা ও তাঁর রাসূল (সা.) এবং ইসলামে নির্দেশিত পথ অনুযায়ী , ঘুমানোর আগে করনীয় কিছু শিষ্টাচার ও আদব রয়েছে । সেগুলো সম্পর্কে খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।

অর্থাৎ একজন ব্যক্তি ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তের কাজকর্ম এবং ঘুম থেকে ওঠা পর্যন্ত কি কি করা প্রয়োজন সে সমস্ত কিছুই আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন । তাই আপনার কাছে আমাদের আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে ।

তাহলে অবশ্যই আপনার মন্তব্যটি কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন । এবং আপনার মন্তব্যের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে আরো ভালো আর্টিকেল তৈরি করার চেষ্টা করব ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মর্ডান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url