ঈদে মিলাদুন্নবী কি ? বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন কিন্তু কোথা ও ঈদে মিলাদুন্নবী কি? এবং ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন কোন তথ্য পাচ্ছেন না । তাহলে আপনার টেনশনের কিছু নাই আপনি ঠিক জায়গাতে এসেছেন ।
আজকে আমরা ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো আসলে ঈদে মিলাদুন্নবী কি ? এবং ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ ? ইত্যাদি অর্থাৎ ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে সমস্ত কিছু নিয়ে আজকে আমাদের এই আর্টিকেলটি । তাই আপনি যদি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি আপনাকে অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে । তাহলে চলুন শুরু করা যাক ।
ভূমিকা
বর্তমানে আমাদের সমাজে ঈদে মিলাদুন্নবী বলতে যেটা বোঝা যায় অর্থাৎ অধিকাংশ এলাকাতে এটি অনেক জাঁকজমক এবং উৎসবমুখর এর মাধ্যমে পালিত হয় ।অধিকাংশ এলাকাগুলোর মসজিদ গুলোতে দেখা যায় যে এই দিনটিতে , আর অন্যান্য সাধারণ দিনের থেকে অনেক গুণ মুসল্লী বেশি থাকে।
এছাড়াও অনেকেই অনেক কিছু করে থাকে , অনেক উৎসবের আয়োজন করে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে ইসলামে এটার বৈধতা ঠিক কতটুকু ? আসলে কি ইসলামে এইভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জায়েজ আছে ? তাহলে চলুন জানা যাক ইসলামী শরীয়তের বিধানে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জায়েজ ?
ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে বক্তব্যমানবতা মুক্তির দূত , প্রিয় নবী ছিলেন একজন আদর্শবান শিক্ষক । তার মধ্যে এমন কোন খারাপ গুণের প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়নি । তিনি ছিলেন মানবজাতির জন্য হেদায়েত স্বরূপ । তিনি যুগে যুগে মানুষদেরকে এটা দেখিয়েছেন এবং এটা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে , ইসলাম কতটা সুন্দর এবং কিভাবে আল্লাহতালার সন্তুষ্টি লাভ করা যায় ।
তিনি ছিলেন সকল গুনের অধিকারী । আর তার আগমনের দিনটিকে ঈদে মিলাদুন্নবী বলা হয়ে থাকে অর্থাৎ যেদিন তিনি আমাদের মাঝে এসেছিলেন সেই দিনটিকে ঈদে মিলাদুন্নবী বলা হয় । আমাদের সমাজে এই দিনটিকে নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু করে থাকে । অনেকেই এমন কিছু করে যেটা ইসলাম সমর্থন করে না ।
অর্থাৎ ইসলাম ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বিষয়ে এটা কোথাও নাই , যে ঈদে মিলাদুন্নবী অনেক জাঁকজমক ভাবে এবং উৎসব মুখর এর মাধ্যমে পালন করতে হবে । ইসলামে এই দিনটিকে পালনের কোন বাধ্যবাধকতা নাই কিন্তু কেউ যদি এই দিনটাকে পালন করতে চাই তাহলে ইসলাম যেভাবে বলে ।
অর্থাৎ ইসলামিক শরীয়ত মতে যেভাবে এই দিনটি পালনের কথা বলা হয় সকলের উচিত সেভাবেই এই দিনটিকে পালন করা। নিচে এই দিনটিকে পালনের বিষয়ে ইসলাম কি বলে ? চলুন সে বিষয়ে দলিলসহ জেনে নেওয়া যাক ।
ঈদে মিলাদুন্নবী কি
ঈদ অর্থ আনন্দ বা খুশি । আর মিলাদুন্নবী বলতে আমাদের প্রিয় নবীর আগমনকে বোঝাই । অর্থাৎ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার সর্বকালের মহামানব এবং মানবতা মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ আল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেন আর এই দিনটিকে ঈদে মিলাদুন্নবী বলা হয় ।
বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেকেই জানেনা যে ঈদে মিলাদুন্নবী কি অর্থাৎ ঈদে মিলাদুন্নবী পালনে ইসলামের বিধান ? তাহলে চলুন জানা যাক ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে , ইসলামে এটার বিধান ঠিক কতটুকু ।
একদা এক সাহাবী সর্বকালের মহামানব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করিলেন যে ইয়া হাবিবুল্লাহ আপনি প্রত্যেক সোমবার কেন রোজা রাখেন । প্রিয় নবী সে সাহাবীর প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন যে এই দিনে আমি আপনাদের মাঝে আগমন হয়েছি , এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে , এজন্য আমি এই দিনে রোজা রাখি ।
আপনারাও চেষ্টা করবেন এই দিনে রোজা রাখার জন্য । ১২ই রবিউল আউয়াল অর্থাৎ ঈদে মিলাদুন্নবী পালনে ইসলামে তেমন বিধি-বিধান নেই । কিন্তু কেউ যদি এই দিনটাকে পালন করতে চাই । তাহলে এই দিনটিতে আপনিও রোজা রাখতে পারেন , অথবা মহানবী সাল্লাহু সাল্লাম এর জীবনী নিয়ে আলোচনা , গজল , কেরাত , এবং দোয়ার আয়োজন করতে পারেন ।
কোন ব্যক্তি যদি এইভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করতে চাই তাহলে সত্যিই এক্ষেত্রে বলা যায় যে এটি প্রশংসনীয় । কিন্তু ঈদে মিলাদুন্নবী বলতে এটা বোঝায় না যে , অনেক জাঁকজমক অনুষ্ঠানের আয়োজন অর্থাৎ নারী-পুরুষ একসাথে রাস্তায় মিছিল , খাওয়া-দাওয়া করা এবং তিনি যেহেতু এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছেন সুতরাং এই দিনটিকে নিয়ে অনেক আনন্দ উৎসব করা ইত্যাদি ।
তাহলে সে ক্ষেত্রে সত্যি এটা অনেক দুঃখজনক এবং ইসলাম এটাকে সমর্থন করে না । সর্বকালের মহামানব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি আমাদের মাঝে থেকে চলে যাওয়ার আগে এটা বলে গেছেন যে
আমার উম্মতেরা আপনারা সব সময় আমার জীবনধারা আপনার জীবনের মধ্যে প্রতিফলন করার চেষ্টা করবেন তাহলে হয়তো আপনারা কোনদিনই পথভ্রষ্ট হবেন না । কিন্তু বর্তমান সমাজে এমন আয়োজন এবং উৎসব যা নবীর জীবনে কখনো কোন দিনই ছিল না ।
সুতরাং এগুলো অনেক দুঃখজনক এবং অনেক হারাম একটি বিষয় । এগুলো করার মাধ্যমে মুসলমানরা পথভ্রষ্ট হচ্ছে । আল্লাহতালা ও তার রাসুল আল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে ।
ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন যে ঈদে মিলাদুন্নবী কি ? তাহলে চলুন এখন ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল সম্পর্কে আলোচনা করা যাক । একদা কিছু সাহাবীগণ একটি ঘরে বসে , মানবতা মুক্তির দূত রহমাতুল্লিল আলামিন এর জীবনী নিয়ে
এবং এই দিনটি অর্থাৎ ঈদে মিলাদুন্নবী ১২ই রবিউল আওয়াল কে নিয়ে আলোচনা করছিলেন এমন তো অবস্থায় মানবতার দূত রহমাতুল্লাহিল আলামিন প্রবেশ করলেন , এবং তিনি শুনতে পেলেন । এরপর তিনি এরশাদ করিয়াছেন যে ,
নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আপনাদের জন্য রহমতের দরজা খুলে দিবেন (দুররুল মুনাজ্জাম) । অন্যদিকে বলা যায় যে একদা এক সাহাবী মানবতার মুক্তির দূত রহমতুল্লিল আলামিন কে জিজ্ঞাসা করলেন যে , হে মানবতার দূত , আপনি প্রত্যেক সোমবার কেন রোজা রাখেন ?
এর জবাবে তিনি বলেছেন যে , (فيهي أوليدتو وافيهي أونزيلا عليا) ফিহী উলিদতু ওয়াফিহী উনযিলা আলাইয়্যা । অর্থাৎ আমি এই দিনটিতে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলাম । এবং এই দিনে আমার ওপর ওহী নাযিল হয় ।
এ বিষয়ে অনেক হাদিসে এসেছেন যে প্রিয় নবী তাদের জন্ম এবং এই দিনে তার ওপর ওহী নাযিল হওয়ার কারণে তিনি এই দিনটিকে নিয়ে অনেক খুশি ছিলেন ।
তাই তিনি এই দিনে রোজা রাখতেন । ইমাম জালালুদ্দীন সৈয়তি (রহ:) , ইমাম জালাল উদ্দিন সিদ্দিক তিনি ছিলেন একজন নবম শতকের মোজাদ্দেদ অর্থাৎ ইসলাম বিষয়ে পুনরুদ্ধ জীবনকারী বলা হতো তাকে ।
ইমাম জালাল উদ্দিন তিনি বলেছেন যে ঈদে মিলাদুন্নবী বলতে কোরআনের তেলাওয়াত করা , রোজা রাখা , জিকির আজগার করা , এবং তার জীবনী নিয়ে আলোচনা করা ।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ?
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হইতে বর্ণিত হয়েছে যে , মানবতা মুক্তির দূত র রহমতুল্লিল আলামিন বলিয়াছেন যে , প্রত্যেক সোমবার ও বৃহস্পতিবারের আমলগুলো আল্লাহতালার কাছে পেশ করা হয় । এবং সোমবারে যেহেতু তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন । এবং সোমবার এর আমলগুলো আল্লাহতালার কাছে যেহেতু পেশ করা হয় ।
এজন্য তিনি সোমবারে রোজা রাখার জন্য জোর দিয়েছেন অর্থাৎ এই দিনটিকে রোজা রাখার উত্তম দিন হিসেবে বলা হয়েছে । অন্যদিকে বলা যায় ১২ ই রবিউল আউয়াল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাম এর জন্মদিন এবং এই 12 ই রবিউল আউয়ালের দিনটিতে তিনি আবার মৃত্যুবরণ করেন অর্থাৎ 12 রবিউল আউয়াল তার জন্মদিন ।
এবং মৃত্যুদিন তাই এই দিনে কেউ যদি রোজা রাখে এবং কোরআন তেলাওয়াত এবং জিকির আজগারের মাধ্যমে দিনটিকে পালন করতে চায় তাহলে এটা কে ইসলাম বৈধ বলে ঘোষণা করেছে । কিন্তু এই দিনে যেহেতু মানবতা মুক্তির দূত জন্মগ্রহণ করেছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন
সুতরাং এই দিনটিকে কেউ যদি আনন্দের সাথে পালন করে তাহলে বিষয়টা কেমন হলো ? এজন্য এ বিষয়ে ইসলাম সমর্থন করে না সুতরাং ইসলাম আমাদের যে বিষয় সমর্থন করে না সেগুলো না পালন করা ভালো ।
পরিশেষে ঈদে মিলাদুন্নবী যদি কেউ পালন করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে ইসলামে যতটুকু বৈধতা দিয়েছে ঠিক সেইটুকু পালন করা । অন্যথায় কেউ যদি পালন করতে চায় তাহলে এই বিষয়ে কোন বৈধতা নেই ।
ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৪ কত তারিখ
এতক্ষণে আমরা সকলে ই বুঝতে পেরেছি যে , ঈদে মিলাদুন্নবী কি ? এবং ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ ? সুতরাং আমাদেরকে যদি এই দিনটিকে পালন করতে হয় তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে , ইসলাম এ বিষয়ে ঠিক কতটুকু বৈধতা দিয়েছে । তাহলে চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক 2024 সালের ঈদে মিলাদুন্নবী কত তারিখ ?
এবং মানবতার মুক্তির দুধ রহমাতুল্লিল আলামিন এই দিনটিকে কিভাবে পালন করেছিলেন । সকল উম্মত এবং সকল মুসলমানদের ঠিক সেভাবে দিনটিকে পালন করা উচিত ।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে ঈদে মিলাদুন্নবী কি এবং ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ ।
এবং আপনার কাছে যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন এবং আপনার মন্তব্যটি কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন এবং এর থেকেও ভালো আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটিতে চোখ রাখুন ।
মর্ডান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url